আদর্শ হিন্দু হোটেল

যাদের মনে অল্পস্বল্প হলেও ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে তাদের জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “আদর্শ হিন্দু হোটেল” অবশ্য পাঠ্য একটা বই।

মুনির হাসান এতদিন এই বই পড়েন নাই জেনে খুব অবাক হলাম।

কোন সিনেমা দেখে, বই পড়ে আমাদের অনেক সময় মনে হয় কাহিনী এমন না হয়ে ওমন হলে ভালো হত। এই রকম অনেক মনে হওয়া থেকেও তো নতুন কিছু সৃষ্টি হয়।

এই উপন্যাস যাকে ঘিরে সে বাবুর্চি হিসেবে একটা খাবার হোটেলে কাজ করে। কর্মক্ষেত্রে যা কিছু অপূর্ণতা তার চোখে ধরা পড়ে সেগুলো কল্পনায় নিজের এক আদর্শ হিন্দু হোটেলে যোগ করে।

নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে একসময় সে কল্পনার হোটেল বাস্তবে রূপ নেয়। মন ভালো হয়ে যাওয়ার মত উপন্যাস।

*****

বাসায় মাঝে মাঝে বাটারবন দিয়ে কফি খাই। বাটারবন ওভেনে ১৫ সেকেন্ড গরম করে কফির মধ্যে চুবাই দেই। তখন মনে হয় এটাই তো একটা সিগনেচার ফুড হতে পারে। ইরানি চা-ওসমানী বিস্কুট টাইপ ব্যাপার। ২০০ টাকা দিয়ে উচ্চারণ করতে কষ্ট হয় croissant ওভারকিল। তারচেয়ে ২৫ টাকার বাটারবন ভালো।

হাজারী ঠাকুর এর মত আমারো মনে হয়, যেদিন একটা কফি শপ দিবো, সেদিন কফির সাথে বাটারবন অর্ডার করতে পারবে মানুষ। আর সব টেবিলে ডেসিবেল মিটার থাকবে। যে টেবিলে শব্দ বেশি হবে মাথার উপর পানি পড়তে থাকবে।

*****

হাজারী ঠাকুর দুপুরের কাজ সেরে বিকালে নদীর ধারে বসে তার আদর্শ হোটেলের স্বপ্ন দেখতো।

তার সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায় গুলোর বিপরীত রূপই তার ভাবনার প্রধান উপাদান।

প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির ব্যবধানটাই মনে হয় আমাদের উৎসাহ দেয় সামনের দিকে যাওয়ার। অপ্রাপ্তির দিকে সব মনোযোগ দিয়ে নিজেরাই নিজেদের জীবন কঠিন করে তুলি।

*****

Story Teller

খসরু স্যারের পজেটিভ মূল্যায়ন করার জন্য মনে হয় একমাত্র
মরহুম ফয়েজ স্যারই ছিলেন। অন্য স্যারদের ও মিটিমিটি হাসতে দেখসি খসরু স্যারের কথা শুনে।

আর ছাত্রছাত্রীদের কথা বাদই দিলাম।

উনাকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম আইডিয়ালে ভর্তি হওয়ার দুই বছর আগে থেকে অন্য একটা স্কুলে। সেখানেও ইংরেজি পড়াতেন। দারুণ সব গল্প বলতেন। জার্মান ভাষায় দুই-চারটা বাক্য বলতেন। আর রবীন্দ্রনাথ তো ছিলোই। আমুদে একজন মানুষ।

যে বছর আইডিয়ালে আসলাম (ক্লাস ৬, ২০০১ ) স্যারও দেখি আইডিয়ালে। কিন্তু কিছুটা গুটিয়ে যাওয়া অবস্থায়। আগের স্কুলে এক ক্লাসে ছিলো মাত্র ২০ জন করে। আর এখানে ৬০ জন করে। স্বাভাবিক ভাবেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করে কথা বলা সম্ভব না।

এরপর ক্লাস নাইনে স্যার আমাদের ক্লাস টিচার । ততদিনে আমাদের মত বানরদের অত্যাচারে স্যার নিজেও হয়তো অতিষ্ট।

সাহিত্যচর্চার ব্যাপারে স্যার খুব প্যাশনেট ছিলেন। কিন্তু একজন সংসারী স্কুল শিক্ষকের জন্য সাহিত্যচর্চা বিলাসিতাই বলা যায়।

মানুষ হিসেবে খ্যাপাটে ছিলেন একটু। কিন্তু কখনো বিষাক্ত মনে হয় নাই।

আরিফ আল কাসেম স্যারের ভালো বন্ধু ছিলেন জানতাম। স্যার মারা যাওয়ার পর খসরু স্যার একটা লেখা লিখেছিলেন। সুন্দর।

স্যার আমাকে এমন মহৎ কিছু শিক্ষা দেন নাই যেটা সারাজীবন মনে রাখবো।

স্যারকে মনে আছে রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কার কবিতা, অথবা ছোট ছোট ইংরেজি গল্প কথা বলার সময় এক্সপ্রেশন গুলোর জন্য। চোখ গুলো মনে হয় জ্বল জ্বল করত। আর গোঁফের আড়ালে হাসি।

He is a natural born story teller.
And crazy, indeed.

 

 

সিএনজি

নতুন সিএনজি গুলোর মধ্যে ব্যাক গিয়ার অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। পুরনো গুলোতে  সহজেই নষ্ট হয়ে যেত।

কোন বেগতিক জায়গায় আটকে গেলে নেমে গিয়ে পেছনে নিতে হত।

এই যে পেছনে যাওয়ার জন্য কষ্ট করা লাগছে, এটা কিন্তু বেশ ভালো।

অনেক কাজ আলসেমি করে করা হয় না। যদি আলসেমি করে পেছনে যাওয়া না লাগতো, অনেক স্বস্তি লাগতো নানা সময়ে।

 

সামনে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই টাইপ পরিস্থিতিতে পড়লে বেশির ভাগ সময় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া লাগে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। এটাই স্বাভাবিক ধরে নিলে অনেক সমীকরণ সহজেই মিলে যায়।

নেপাল – ৮

থামেল থেকে ১৫ কিমি দূরে ভক্তপুর। আমরা রওনা দিলাম সকাল ৯ টায়। আজকে এখানে মনে হয় সাপ্তাহিক বন্ধ। রাস্তাঘাটে বেশি জ্যাম পেলাম না।

বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু সে বাস স্ট্যান্ডে যেতে নাকি ২৫-৩০ মিনিট হাঁটা লাগবে। মাফ চাই। ট্যাক্সি নিলাম। আগের দিন অন্যসব ট্যাক্সি বলল ১০০০-১২০০ ওয়ান-ওয়ে। আমরা যদিও ৭০০ তে একজন পেলাম।
ট্যাক্সিতে উঠে কিছু রুটিন প্রশ্ন করি। বাড়ি কই? যেতে কেমন সময় লাগে? ফ্যামিলিতে কয়জন থাকে? ছেলেমেয়ে থাকলে তারা স্কুলে যায় কিনা? তাদের বয়স কেমন?

আগে ঢাকাতে রিকশায় উঠলে একই কাজ করতাম। কিন্তু এখন একদমই করা হয় না। আগের মত অবশ্য ধানমণ্ডি থেকে রামপুরা আসাও হয়না রিকশা করে। তার উপর হেডফোন থাকে। কানে গুঁজে রোবটের মত বসে থাকি।

Read the rest of this entry

নেপাল – ৭

থামেল

নাগরকোটে আমরা ২ দিনের জায়গায় একদিন থেকে পালাই যাচ্ছি। খাবার ভালো ছিল। সকালের নাস্তা খুব ভালো। রুমটা একটু স্যাঁতসেঁতে। আমাদের দুইজনের জন্যই খুব একটা ভালো না সেটা। এলার্জি।

সকাল ৮ টা বাজতেই কড়া রোদ। যদিও সামনের দিকে তাকালে দেখি সব সাদা। আমরা মনে হয় আস্ত একটা মেঘের ভেতর বসে আছি।

পাহাড়ের বিভিন্ন স্তরে স্তরে আরো অনেক রিসোর্ট। একটায় আবার ইনফিনিটি সুইমিংপুল। সারসে!!
এখান থেকে বেশ কিছু ছোট ট্রেকিং রুট আছে। ৩-৫ ঘন্টার। কিন্তু আমাদের জন্য এখানে থাকা একটা মানসিক চাপের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পালাতে পারলে বাঁচি।

ট্যাক্সি নিলাম। গন্তব্য থামেল। এবার আমরা বর্তমানের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। আশেপাশের কয়েকটা দম বন্ধ করা সুন্দর হাটার রাস্তা দেখলাম।
অর্ণপূর্ণা বেসক্যাম্পে না গেলে হবে না মনে হয়। সেখানে যাওয়ার পথে নাকি অজস্র ছোটবড় ঝর্ণা। গরম পানির পুষ্কুনি। বাহার ভাই, আপনি কই?

Read the rest of this entry

নেপাল – ৬

নাগরকোট

কিউবার এক কাউচ সার্ফার এর সাথে পরিচয় হল। ৭৫ টা দেশ ঘুরেছেন। আমাদের ওয়াও শুনে বললেন, “It’s not even half”।
বললাম, টেকাটুকা কে দেয় শুনি! কিসের ব্যবসা ঝটপট বলে ফেল।

আগের বার পোখারা ছেড়ে যাওয়ার সময় ভাবছিলাম আবার আসবো এখানে।
৫ দিন এখানে থাকার পরও একই কথা মনে হল।

পোখারা থেকে কাঠমান্ডু আসার রাস্তা সুন্দর। কিন্তু আমার এত বড় সময় বাসে বসে থাকতে বিরক্তি লাগে।

Read the rest of this entry

নেপাল – ৫

পোখারা ৫ম দিনঃ
আমরা খুব সফলতার সাথে আমাদের খাবারের বাজেট ক্রস করে ফেলসি।
বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট বাদ দিবো চিন্তা করেও পারি নাই।
“এক বেলা খেয়ে দেখি” এই চিন্তা আমাদের ডুবাইসে। দিন শেষে দেখা গেল তিন বেলাতেই আমরা আমাদের জন্য হাই-এন্ড রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি। ঢাকায় যেটা আমাদের এক মাসের বাজেট বাইরে খাওয়ার, সেটা এখানে একদিনের খরচ হয়ে দাড়াচ্ছে। এই বছরের বাকি মাসগুলো ঝালমুড়ি আর বাদাম খেয়ে কাটানো লাগবে।

আজকে লেকের শেষ দিকে আসলাম। এখানেই বেশিরভাগ বাজেট হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। গেলাম laughing buddha তে। ফ্যান নষ্ট। গরমে কাহিল অবস্থা। খাবার বেশ সস্তা। রাস্তার উল্টা দিকে একটা বেকারি। সুন্দর সুন্দর বেকারি আইটেম। ফ্রেশ। এই এরিয়াতে ১৫০-২০০ টাকায় তিন বেলার খাবার হয়ে যাবে মনে হয়।

 
Read the rest of this entry

নেপাল – ৪

পোখারা ৪র্থ দিনঃ

– আর কতদূর?
– এই মনে কর হাফ কিলো।
– ও আচ্ছা।
– হাফ কিলো হচ্ছে আমাদের বাসা থেকে হাতিরঝিলের বাস স্টপেজ আর কি।
– ওকে।
………
ঐটা কত দূর?
আমাদের বাসা থেকে হাতিরঝিলের বাস স্টপেজের হাফ দূরত্ব।
-_-

আমাদের দূরত্ব এর নতুন একক বাসা থেকে হাতিরঝিলের বাস স্টপেজ।
……..

লজের পাশের কফির দোকানে গেলাম সন্ধ্যায়। কাজু নামের এক জাপানির দোকান। নানা রকম কফি বানানোর মেশিন, সবই ম্যানুয়াল। শুধু এসপ্রেসো মেশিন ছাড়া।
এত ভ্যারিয়েশন আমি নর্থএন্ডেও পাই নাই। মেনু
দেখে তব্দা খেয়ে গেলাম। এত এত অপশন। দামও অস্বাভাবিক না।

লজে সন্ধ্যার সময় দেখি বিশাল সাইজের মশা। ডাইনোসররা যদি বেঁচে থাকতো এই মশার কামড়েই কুপোকাত হয়ে যেত।

Read the rest of this entry

নেপাল – ৩

পোখারা ৩য় দিনঃ

লেক সাইড থেকে আজকে পিস প্যাগোডা যাবো। যারা একদিনের জন্য আসেন তারা সাধারণত বিকালে এখানে এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে যান। আমরা এখানে এক রাত থাকবো পাহাড়ের উপর।

লেক সাইড থেকে এখানে ওয়ান-ওয়ে ট্যাক্সি ৮০০ টাকা। যাওয়া-আসা মনে হয় ১৫০০।

আমরা লোকাল বাসে করে প্যাগোডার পাহাড়ের নিচে আসলাম। ভাড়া লাগলো ৭০ টাকা। কিন্তু এবার উপরে যাওয়ার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাই না। এক ট্যাক্সি বলল ৫০০ লাগবে। কচু কোথাকার।

হেঁটে গেলে দেড় ঘন্টা লাগবে। একা হলে আল্লাহু আকবর বলে হাঁটা দিতাম। কিন্তু বউ নিয়ে উঠলে আধা পথ যেয়ে বউ বলবে, “ওগো আমাকে কুলে নাও!”
  Read the rest of this entry

নেপাল – ২

পোখারা ২য় দিন:
গুগল ম্যাপে কোন distance যদি দেখি ৩-৪ কিলো, আমি তখন হাঁটা ধরি। কিন্তু সাথে কেউ থাকলে এটা করতে পারি না। কারণ বেশির ভাগ সময় দেখি আমার সাথের জন আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে গিয়ে রীতিমতো দৌড়াচ্ছে।
এখানে আর্দ্রতা কম। কড়া রোদেও ঘাম হয় না। আমাদের দেশে সারা বছর বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প ভরা বাতাস উড়ে আসে। আর্দ্রতা অনেক বেশি। খুব তাড়াতাড়ি ঘাম হয়, সহজে শুকায় না।

পোখারাতে যা দেখার বেশির ভাগ একদিনেই শেষ করা যায়। ম্যাপে মাউন্টেন মিউজিয়াম নামে একটা জায়গা দেখলাম। ৪ কিলোমিটার এর মত দূরত্ব। ট্যাক্সিকে জিজ্ঞেস করলাম, যাওয়া আসা মিলিয়ে ১০০০ টাকা। তার মানে ৮ কিলোর ভাড়া। তমার হলুদ ট্যাক্সিতেও তো এতো আসবে না মনে হয়। আমার দুনিয়া খুব ছোট। সেখানে সবচেয়ে দামি রাইড তমার ট্যাক্সি। Read the rest of this entry